শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের শূন্যরেখায় ক্যাম্প করে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরে যেতে ভয়-ভীতি দেখানো মিয়ানমার সৈন্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যরা দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। মিয়ানমার সৈন্যদের ফাঁকা গুলিবর্ষণের পর এলাকায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা অন্তত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা বান্দরবান সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায়। এই রোহিঙ্গাদের শূন্য রেখা থেকে সরে যেতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল বলে জানান বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।
এরপর মধ্য ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খ শোয়ের ঢাকা সফর এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গঠিত দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়। এরপর কয়েক দিন বিরতি দিয়ে আবারও শূন্যরেখায় অবস্থানরতদের সরে যেতে মিয়ানমার সৈন্যরা হুমকি দিতে থাকে বলে বিজিবি কর্মকর্তারা জানান।
‘সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকালে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পের কাছাকাছি এসে মিয়ানমারের বিজিপি রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়। কয়েক ঘণ্টা অন্তর মাইকিং করে সেখান থেকে তাদের চলে যেতে বলা হয়। পাশাপাশি সীমান্তের ক্যাম্পের পাশে মিয়ানমারের ভেতরে বিজিপি অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করে। সকালে বিজিপির কয়েকটি গাড়িতে বেশ কিছু সৈন্য এখানে আসে। দুই শতাধিক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগে থেকেও সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের আরও দুই শতাধিক সীমান্তরক্ষী মোতায়েন ছিল।’
শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরিফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে বিজিপির সৈন্যরা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে অস্ত্র তাক করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেয়।তারা কাঁটাতারের উপর মই দিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশ করে হামলারও চেষ্টা চালায়। এ সময় মিয়ানমারের ভেতরে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পাহাড়ে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিজিপি সৈন্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। দুপুরের পর বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি অবস্থান জোরদার করলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা ভারী অস্ত্র-শস্ত্র সরিয়ে নেয়।’
এদিকে বিকালে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লিউন উকে তলব করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সীমান্ত থেকে মিয়ানমার সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তার কয়েক ঘণ্টা পর ফাঁকা গুলিবর্ষণ করলেন বিজিপি সদস্যরা।